📌চঞ্চল চৌধুরীরা (Chanchal Chowdhury) ভুলে যান বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। এ দেশের মানুষেরা স্বাধীন। খেলায় প্রতিবেশী দেশকে সমর্থন করতেই হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ইন্ডিয়ানরা কি বাংলাদেশ দলকে সমর্থন করে? নাহ। আমি তো দেখেছি বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলায় বাঙালির ইডেন গার্ডেনে ভারতীয়রা পাকিস্তানকে সমর্থন দিচ্ছে। যে যেই দলকে সমর্থন করে, সেই দল জিতলে উল্লাস করবেই। ক্রিকেটে ভারত, পাকিস্তানের পর অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্টারই বেশি।
জানি, ব্যাপারটা এরকম সরল নয়। বাংলাদেশের মানুষ এখন ভারতকে পছন্দ করে না। এর পেছনে অনেক অনেক কারণ, ক্রিকেটীয় কারণ খুব সামান্য। ক্রিকেট খেলাটাকে নিজেদের জিম্মায় রাখা, আইসিসি ও এসিসিকে কব্জা করে রাখার কারণে কেবল বাংলাদেশ না সারা দুনিয়াতেই ক্রিকেটপ্রেমীরা ভারতকে পছন্দ করে না। বাংলাদেশ দলের বাইরে বাংলাদেশে ইন্ডিয়া ক্রিকেট দলের সমর্থকই বেশি--এই সমর্থকরাও এখন ইন্ডিয়া হারাতে উল্লাস করে। ক্যানো এমনটা হলো? কারণটা রাজনৈতিক, কারণটা স্বদেশপ্রেম। সারাক্ষণ বাংলাদেশের ওপর খবরদারি, খরানের সময় তিস্তার ন্যায্য পানি না দেওয়া এবং বর্ষায় অতিরিক্ত পানি ছেড়ে বন্যা উপহার দেওয়া, সীমান্ত-সন্ত্রাস, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে যথেষ্ট সম্মান না দেওয়া, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মানুষের ওপর ১৫ বছর ধরে জুলুমকারী স্বৈরশাসককে টিকিয়ে রাখা, বিজেপি সরকারের বাংলাদেশনীতি ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভারতকে পছন্দ করে না। রাগ-ক্ষোভগুলি মেটায় ইন্ডিয়া ক্রিকেট দল হারলে, উল্লাস করে। এর পেছনে ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা তেমন নাই।
বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারত হারার পর বাংলাদেশে অনেক মানুষ উল্লাস করেছে। এদের একটা অংশ অস্ট্রেলিয়া সমর্থক, আরেকটা অংশ ভারতের হারাতেই খুশি। এই উল্লাসের জন্য অনেক ভারতীয় বাংলাদেশকে ভারতের এটাচড টয়লেট বলছেন, কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন তুলে দেওয়া হোক দাবি করেছেন, চিকিৎসা এবং বেড়ানোর জন্য বাংলাদেশিদের ভিসা না দেওয়ার দাবি তুলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সহায়তা করা উচিত হয়নি টাইপ কথাও বলছেন। তাদেরকে বলি, বাংলাদেশের প্রতি আপনাদের মনোভাব কেমন এই এটাচড বাথরুম, বাংলাদেশকে কাংলাদেশ বলায় বোঝা যায়। চিকিৎসা আর বেড়ানোর জন্য ভারত ভিসা দেওয়া বন্ধ করলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরাট উপকার হবে, আর ভারতের অর্থনীতি ধসে পড়বে। ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রায় অর্ধেক উৎস বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী আর পর্যটকরা। ভিসা নিতেও টাকা দিতে হয়। ভিসা নিতে গিয়ে, ভিসা নিয়ে সীমান্ত পাড় হতে, সীমান্ত পাড় হয়ে ভারতে ঢুকে হোটেল পেতে সাধারণ বাংলাদেশিদের যেরকম হয়রানির শিকার হতে হয় তা সারা দুনিয়ায় নজিরবিহীন। এত ভালো ভালো মেডিকেল কলেজ যে দেশে, যে দেশের ডাক্তার-নার্সরা অত্যন্ত সম্মানের সাথে দুনিয়াব্যাপি কাজ করে, সেই দেশের মানুষদের চিকিৎসা করাতে কেন প্রতিবেশি দেশে যেতে হয়! কারণ বিরাট একটা সিন্ডিকেট বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থাকে টালমাটাল করে রেখেছে। কার স্বার্থে? এ দেশের রোগীরা দেশেই সুচিকিৎসা পেলে বিরাট অঙ্কের টাকা দেশেই থাকবে। কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন না থাকলে তেমন কিছুই আসে যায় না, কিন্তু বাংলাদেশে বইয়ের দোকানদাররা কলকাতার বই বেচা বন্ধ করে দিলে পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রকাশকই হয়ত টিকতে পারবে না। আর স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা? সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ, সেই ঋণ শোধ করতে তো আমরা ভারতের গোলাম থাকবো না। কোনো রাষ্ট্রের গোলাম হতে আমরা স্বাধীন হইনি।
ভারতীয়রা ক্ষোভে অনেককিছুই বলছে, তা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে বাংলাদেশে বসে অনেকে বলছে বলিউডের সিনেমা দেখা, ভারতের চাল-ডাল-পেঁয়াজ খেয়ে তাদের হারে উল্লাস করা কিভাবে সম্ভব! আরেহ চো*দনারা, সিনেমা ফ্রি দেখে? পেঁয়াজ, চাল-ডাল ভারত আমাদেরকে ফ্রি দেয়? টাকা দিয়ে আমদানি করা লাগে। এর সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঢেলে দিচ্ছে! চঞ্চল চৌধুরীর মতন অনেকেই বলছেন, ভারতের হারে যারা উল্লাস করে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানীদের রেখে যাওয়া বংশধর! কিরকম অপমাজনক কথা! মানে কি হে, ভারতকে পছন্দ না করলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী হয় কীভাবে? যাদেরকে আপনারা পাকিস্তানের রেখে যাওয়া বংশধর বলছেন, তারাই ভারতীয় আগ্রাসন থেকে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার ব্যাপারে সচেতন এবং চিন্তিত। একটা অংশ যেমন বাংলাদেশে থেকেও পাকিস্তানের প্রতি প্রেম বেশি, তেমনি আপনাদের প্রেম বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের প্রতি বেশি। এই দুইটা গোষ্ঠীর কেউই বাংলাদেশকে নিজেদের দেশ মনে করে না।
চঞ্চল চৌধুরী, আপনি ভারতীয় মিডিয়ায় বলছেন ভারতের পরাজয়ে উল্লাস করা বাংলাদেশিরা পাকিস্তানিদের রেখে যাওয়া জিন বহন করে, মানে দেশের নব্বই শতাংশ মানুষের রক্তই দূষিত! চঞ্চল চৌধুরী, আপনি রাতের ভোটের বাকশালীদের পক্ষের লোক হিসাবে নিজেকে আগেই প্রমাণ করেছেন, এবার প্রমাণ করলেন আপনি বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিগোষ্ঠী আরএসএস-এরও লোক। আপনি ওদের ভাষাতেই কথা বলেছেন। যেন আপনি বাংলাদেশের না, ভারতের নাগরিক এবং আরএসএস-এর প্রতিনিধি।
জনবিরোধী এই অভিনেতাকে বয়কট করার সময় এসেছে।✅
0 মন্তব্যসমূহ
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।